কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক। এ খাতে ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণও তেমন বিতরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় এ খাতের ঋণে আগ্রহী করতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপক ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণখেলাপি করার সময়সীমা অন্য সব খাতের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণেও ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে ব্যাংকগুলোয় পাঠানো হয়।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ঋণ এক বছর পর্যন্ত অপরিশোধিত থাকলে তা মন্দ বা কুঋণে পরিণত হতো। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এখন হবে আড়াই বছর পর। অর্থাৎ দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। এভাবে খেলাপি ঋণের সব ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করতে নীতিমালা শিথিল করা হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলোর এ খাতে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন খাতে যে অর্থ আটকে রয়েছে সেগুলোও বাজারে চলে আসবে। এ ছাড়া নতুন করে এ খাতে ঋণখেলাপি হতে বেশি সময় লাগবে। একই সঙ্গে খেলাপির বিভিন্ন শ্রেণিতে যেতেও বেশি সময় লাগবে। এসব শ্রেণিতে প্রভিশন রাখার হারও কমানো হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তহবিল প্রভিশন খাতে আটকে থাকার পরিমাণ কমে যাবে। নিজস্ব তহবিলের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ঋণ বিতরণের সক্ষমতা বাড়বে ব্যাংকগুলোর। কোনো ঋণখেলাপি হলে সময় অনুযায়ী তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে নিম্নমান, সন্দেহজনক ও মন্দ ঋণ। নতুন নীতিমালা শুধু কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে অন্য খাতে প্রচলিত নীতিমালা বহাল থাকবে।
করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কম সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে। এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও তা বিতরণ করা হচ্ছে না। এ খাতে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালায় ওই ছাড় দিয়েছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণের কিস্তি বা ঋণ পরিশোধের শেষ দিনের পর থেকে তিন মাস পার হলেই তা বিশেষ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হতো। এটি খেলাপি ঋণের আগের ধাপ। নতুন নীতিমালায় এ সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে এখনো কোনো ঋণ বা এর কিস্তি অপরিশোধিত থাকা অবস্থায় ৩ মাস পার হলে তা বিশেষ অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। আগে এ ধরনের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হতো ১ শতাংশ হারে। এখন কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখানে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের শেষ দিন থেকে ৬ মাস পার হলেই তা নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হতো। নয় মাসের কম সময় পর্যন্ত নিম্নমান হিসেবে বিবেচিত হতো। নতুন নিয়মে কিস্তি পরিশোধের ৬ মাস থেকে ১৮ মাসের কম বা দেড় বছরের কম সময় পর্যন্ত নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ খাতে সময়সীমা বাড়ল ৯ মাস। নি¤œমান ঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল ২০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ খাতে প্রভিশনের হার কমে ১৫ শতাংশ। আগের নিয়মে কোনো চলমান ঋণ বা এর কোনো কিস্তি পরিশোধের ৯ মাস থেকে ১২ মাসের কম সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসাবে থাকলে তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হতো। এখন ১৮ মাসের বেশি থেকে ৩০ মাসের কম বা আড়াই বছরের কম সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে থাকলে তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হবে। সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল ৫০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ছাড় দেওয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ।
Leave a Reply